কেমন দেশ চাই

রাষ্ট্র ও সমাজে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা একটি দীর্ঘ সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লড়াই।
বাংলাদেশে ১৯৯০ দশকের শুরুতে একটি নতুন বোঝাপড়া ও অলিখিত সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে একটি নতুন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পর, অনেক হোঁচট খেয়েও সেই লড়াই এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে টিকিয়ে রেখেছিলো।
কিন্তু ২০১৪ সালের ভোটার-বিহীন নির্বাচনের পর সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের গুণগত বিকাশের লড়াইয়ের বদলে বাংলাদেশের জনগণকে ফিরে যেতে হয়েছে জান, জবান ও বেছে নেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার গোড়ার সংগ্রামে।
এই উল্টো যাত্রায় সরকার ও রাষ্ট্রের জবাবদিহিতাহীন, প্রতিষ্ঠান বিধ্বংসী এবং স্বৈরাচারী চরিত্র দেশের সকল নাগরিককেই একটি নতুন উপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-রাজনৈতিক মতভেদ নির্বিশেষে প্রায় সকলের কাছেই অনুভূত হচ্ছে যে, এই রাষ্ট্রের বর্তমান শাসন প্রক্রিয়া, আইন-বিচার-ব্যবস্থা-প্রতিষ্ঠান-ক্ষমতার সাথে নাগরিকের সম্পর্ক, নীতি-দর্শন-চিন্তাধারাসহ প্রায় সকল বিষয়েই একটি সামগ্রিক পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই পরিবর্তনের রূপরেখা কী হবে বা আগামী রাষ্ট্রের স্বরূপ কী হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তা সক্রিয় রয়েছে।
এই মতামতগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বাস্তবতায় বর্তমান মূলধারার গণমাধ্যমে সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হলেও, সামাজিক পরিসরে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিতই আলোচিত হচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে, আমরা তিনজন – সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, ফাইজ তাইয়েব আহমেদ, এবং জিয়া হাসান দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তা চর্চার একটি পোর্টালের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজ সংস্কারের এই গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাগুলোকে এক জায়গায় তুলে আনার কথা ভেবেছি।
আমরা মনে করেছি, পূর্ব-নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট কোন আদর্শ-ভিত্তিক রাষ্ট্র-ভাবনা দিয়ে আগামী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারিত হবে না। বরং, রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সামাজিক এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মিথস্ক্রিয়া-উদ্ভূত দৈনিন্দিন বোঝাপড়ায় নিয়মিত যে সত্যগুলো নির্মাণ হবে, তার বাস্তবতাতেই একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামো গড়ে উঠবে।
এহেন পরিস্থিতিতে, সমাজের ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন দ্বান্দ্বিক প্রশ্নগুলোতে চিন্তকদের ভাবনাকে উপস্থাপন এবং তাদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ও বোঝাপড়া তৈরি এবং চিন্তার গন্তব্যে ক্রমাগত স্বচ্ছতা আনা – বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এই ভাবনা থেকেই, www.kemondeshchai.com পোর্টালটির জন্ম।
কেমন দেশ চাই – একটি চিন্তা চর্চার প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন আলোচকদের গবেষণা ও পর্যালোচনা প্রকাশের মাধ্যমে ‘কেমন দেশ চাই’ প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিদ্যমান কাঠামোগত সংস্কার থেকে শুরু করে অর্থনীতি , রাজনীতি, উন্নয়ন দর্শনসহ বিবিধ বিষয়ে বিভিন্নমুখী চিন্তাকে এখানে উপস্থাপন করা হবে।
কেমন দেশ চাই-এর উদ্দেশ্য গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক ন্যায়বিচার-যুক্ত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের বিষয়ে পর্যালোচনা বা পর্যবেক্ষণগুলোর ভেতর দিয়ে – কেমন দেশ চাই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। তাই, একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণাকে আত্মস্থ করা ডান-বাম-মধ্য যেকোনো চিন্তাধারার, যেকোনো লেখকের লেখা এখানে প্রকাশিত হতে পারে।
নতুন এবং মৌলিক পর্যালোচনার পাশাপাশি পূর্বে প্রকাশিত কিন্তু ধারণাগতভাবে মৌলিক চিন্তাগুলো কেমন দেশ চাই-এ প্রকাশ করা হবে।
আমরা মনে করি সময়ের প্রয়োজনে উদ্যোগ গ্রহণ, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পাদকীয় নীতি নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট লেখকদের সাথে কার্যনির্বাহী সম্পাদকদের সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়া বাদে উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের ভূমিকা নগণ্যই থাকা উচিত। কারণ, লেখক ও পাঠকের সরব উপস্থিতি এবং সম্পাদকের সক্রিয়তাই এই প্ল্যাটফর্মটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা রাখবে।
কেমন দেশ চাই, এই প্রশ্নটির কোন একক বা সঠিক উত্তর নেই। বিভিন্ন জনের কাছে উত্তরটি বিভিন্ন রকম। কিন্তু, সমাজের বিভিন্নমুখী চিন্তাগুলো অনুসরণ করলে বুঝা যায়, যে নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা সকলে দেখি, তার স্বরূপ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের ধারণাগুলো এখনও স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। এই ভাবনাগুলো আরো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কেমন দেশ চাই, চিন্তা চর্চার মাধ্যমে সেই স্বচ্ছতা তৈরির কাজটি করতে চায়।
কারণ, যত কঠিন দুঃসময়ের ভেতর দিয়েই যাই না কেন, বদলে দেওয়ার স্বপ্ন আমরা ভুলে যেতে পারি না।
আমরা আশা করি, পাঠকেরা নিয়মিত সাবস্ক্রাইব করে এবং বিভিন্ন লেখকদের লেখা পাঠ করে, এই পরিক্রমার সাথে থাকবেন। সাইটের শুরুর দিকে অনভিজ্ঞতাবশত অনেক ভুল-ত্রুটি হতে পারে, তার প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি রাখার অনুরোধ থাকলো।
সম্পাদকীয় পরিষদ
সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া
ফাইজ তাইয়েব আহমেদ
জিয়া হাসান
কার্যনির্বাহী সম্পাদক
স্বপন ইসলাম